ফজরের নামাজের ১০ ফজিলত জানুন

সুপ্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আজকের টাইটেল থেকে আপনার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আজকে কি সম্পর্কে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব। হ্যাঁ আপনি সঠিক দেখেছেন আজকে আমরা আলোচনা করব ফজরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে।

প্রিয় পাঠক আপনি যদি ফজরের নামাজের ১০ ফজিলত সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই পর্বটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়ুন আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করব ফজরের নামাজের ১০ ফজিলত সম্পর্কে জানতে হলে পুরো পরবর্তী খুব মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ফজরের নামাজের ফজিলত ও পুরস্কার

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আলাদা আলাদা ৫ টি ফজিলত রয়েছে। ফজরের নামাজ পড়লে চেহারার উজ্জ্বলতা আরো বেড়ে যায়। জোহরের নামাজ পড়লে ইনকাম বৃদ্ধি পায়। আসরের নামাজ পড়লে শরীর সুস্থ থাকে। মাগরিবের নামাজ পড়লে টেনশন মুক্ত থাকা যায় এবং সবশেষে এশারের নামাজ পড়লে রাতে শান্তিতে ঘুমানো যায়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা যেমন মুসলিমদের জন্য আবশ্যক।

তেমনি এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য কিছু ফজিলতও রয়েছে। প্রত্যেকটা ওয়াক্তের বিভিন্ন ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে ফজরের সালাতের ফজিলত বেশি। যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল মহান আল্লাহতালার জিম্মায় সেই ব্যক্তি চলে গেলেন।

ফজরের নামাজের ১০ ফজিলত

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাত হিসাব করা হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল ঠিক হিসেবে বিবেচিত করা হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। সালাত আদায়ের তুলনায় ফজরের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ যে সময় সবাই ঘুমিয়ে থাকে, সেই সময় আপনি আরামের ঘুম ভেঙ্গে সালাত পড়েন। এটি করাও কিন্তু অত সহজ কাজ নয়।

১।হাদিসে  বলা হয়েছে যে, মুনাফিকদের কাছে ফজর ও এশার সালাত সবচেয়ে কষ্টকর মনে হয়। কিন্তু ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য ফজরের সালাত আদায় করা সহজ। তাই ফজরের নামাজ আদায় করা ঈমানের অঙ্গ। মুনাফিক থেকে মুক্তি পাবে। আবু হুরায়ারা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলার রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম বলেছিলেন মুনাফিকদের উপর ফরজ ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানতো তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে অবশ্য মসজিদে উপস্থিত হতো।

২। ফজরের নামাজ পড়লে ঐ ব্যক্তির সেই দিনের আল্লাহ নিজের হাতে তুলে নেয়। সে ব্যক্তি আল্লাহর নিরাপত্তার ভিতর প্রবেশ করে ফেলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছিলেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদের কোনরূপ অভিযোগ না করেন।

৩। ফেরেশতারা ওই ব্যক্তি পক্ষ করে আল্লাহর কাছে হিসাব দেয় যে, সে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়েছে। এতে করে আল্লাহতালা অনেক খুশি হয়ে যায়। সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে। আবু হুরায়ারা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন তোমাদের কাছে দিনে ও রাতে যে ফেরেশতারা আসে তারা ফজর ও আসরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্য ছিল তারা উপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সবকিছু জানেন তবুও ফেরেস্তাদের প্রশ্ন করেন হে ফেরেশতা, আমার বান্দাদের কেমন রেখে আসলে। ফেরেশতারা বলেন আমরা তাদের নামাজরত অবস্থায় রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম তখনও আমরা তাদের নামাজরত অবস্থায় পেয়েছি। আর এখন চলে এসেছি তখন আরামের ঘুম হারাম করে তার নামাজ পড়ছিলো।

৪। যদি সঠিক ওয়াক্তে জামাতের সাথে ফজরের নামাজ পড়া যায় তাহলে, সারারাতের তাহাজ্বতের নামাজের সোয়াব সে ব্যক্তি পেয়ে যায়। ফজরের নামাজে দাঁড়ানো সারারাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান। যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফলের নাম আর জামাতের সাথে আদায় কর সে ব্যক্তি পুরো রাত জেগে নামাজ পড়ল।

৫। কোন ব্যক্তি যদি আরামের ঘুম ভেঙে ঠান্ডা পানি দিয়ে অজু করে। জামাতের সাথে আলো থেকে নামাজ পড়ে তাহলে, কেয়ামতের দিন সে ব্যক্তির জন্য অনেক আলোর ব্যবস্থা করে দেবেন আল্লাহ তায়ালা। পরিপূর্ণ এক হজ ও ওমরার সোয়াব পাওয়া যায় যদি কোন ব্যক্তি সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে শামিল থাকে। আনাস ইবনে মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুল সাঃ বলেছিলেন যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে আল্লাহর জিকিরে যুক্ত থাকে। সে পরিপূর্ণ এক হাত ও ওমরার সওয়াব পাবে।

৬। আল্লাহ তায়ালাকে জান্নাতীদের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। পূর্ণিমার চাঁদকে যেমন অনেক স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। তেমনি সেই ব্যক্তি আল্লাহ তালাকে অনেক স্পষ্টভাবে দেখতে পারবে। তাই ফজরের সালাত আদায় করলে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাকে দেখার সৌভাগ্য সে পেয়ে যাবে। এমন কি সে আল্লাহকে নিজের চোখে দেখার জন্য ভিড়ের সম্মুখে না হতে হবে না।

৭। যদি ফজরের নামাজ আদায় করা যায় তাহলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। যে ব্যাক্তি আসর এবং ফজরের নামাজ সময়মতো অর্থাৎ জামাতের সাথে পড়বে সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আবু জুহাইর উমারা ইবনে রোয়াইবা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল পাক সাঃ কে বলতে শুনেছ্‌ যে ব্যক্তি সূর্য উদয় ও অস্তের পূর্বে অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ আদায় করবে সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।

৮। যারা ফজরের সালাত আদায় করবে তারা বরকতের ভাগীদার হবে। কারণ সেই সময়ে আল্লাহর বরকত চারদিকে ছড়িয়ে যায়। কেউ যদি সেই সময়ে ফজরের সালাত আদায় করে তাহলে তার ঘরে বরকত ছড়িয়ে যায়। সেই দিনের করা প্রতিটা কাজে বরকত ছড়িয়ে যায়।

৯। ফজরের দুই নামাজ ফরজ রাকাত নামাজ যদি আদায় করা যায়, দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যবর্তী সব কিছুর মালিক হওয়ার চাইতে সর্বোচ্চ সম্পদ সারি হয়ে যাবে সে ব্যক্তি। হযরত আয়েশা রাযিতাল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সব কিছু থেকে শ্রেষ্ঠ।

১০। ফজরের নামাজ আদায় করলে মন ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তার মনটা সারাদিন ভালো থাকবে। যে কোন কাজে খুব সহজে মন বসে যাবে । এছাড়াও অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ব্রেন ভালো থাকে পড়াশোনায় মনোযোগ বসে। মানসিক চাপ থেকেও মুক্তি পায়। আরো অনেক কিছু সুবিধা পাওয়া যায় শুধু এ ফজরের সালাত আদায় করার জন্য।

ফজরের নামাজের স্ট্যাটাস

প্রিয় পাঠক আপনি জানতে চেয়েছেন ফজরের নামাজের স্ট্যাটাস সম্পর্কে আপনি যদি না জেনে থাকেন ফজরের নামাজের স্ট্যাটাস সম্পর্কে, তাহলে আজকের এই পর্বটি আপনার জন্য জানতে হলে পুরো পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

  • ফজরের নামাজ দুনিয়ার অন্য কিছুর থেকে সব থেকে উত্তম।
  •  পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সবথেকে ফজিলতপূর্ণ ওয়াক্ত হল ফজরের ওয়াক্ত।
  • যারা ফজরের নামাজ পড়ে তাদের দিন শুরু করে, আল্লাহ তার পুরো দিনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।
  • ফজরের সময় আল্লাহ তা'আলা বাতাসের মাধ্যমে চারিপাশে বরকত ছড়িয়ে দেয়। যারা ফজরের সালাত আদায় করে তাদের ঘর সহ বিভিন্ন কাজে সে বরকতটি ছড়িয়ে যেতে থাকে।
  • প্রতিটি নামাজেরই কিছু নির্দিষ্ট ফজিলত রয়েছে এগুলোর মধ্যে ফজরের নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। 

ফজরের নামাজের বৈজ্ঞানিক উপকারিতাঃ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া মুসলমানের জন্য ফরজ। এটি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। এই নির্দেশটির লঙ্ঘন করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা রয়েছে, এমনটিকে হাদিসে শোনা যায়। অথচ তারা কেউই জানে না পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের ফলে, মানুষের দেহের অনেক উপকারিতাও রয়েছে। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে সুস্থ রাখা যায়।

যদি কেউ নিয়মিত ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, তাহলে তাদের হাড়ের যেকোনো ব্যথা খুব সহজে দূর হয়ে যাবে। ব্রেন ভালো থাকবে। এমন কি গবেষণায় ও জানা গেছে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ফলে শরীরের রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এমনকি নামাজ পড়ার ফলে তাদের মানসিক অবস্থা আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে যায়। 

ফজরের নামাজের ফজিলত হাদিস

প্রিয় পাঠক এই পর্বে আমরা আলোচনা করব ফজরের নামাজের ফজিলত ও হাদিস সম্পর্কে। আপনি যদি না জেনে থাকেন ফজরের নামাজের ফজিলত ও হাদিস সম্পর্কে তাহলে আজকের এই পর্বটি আপনার জন্য। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেই ফজরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে।

১)ফজরের নামাজ মুমিনদের জন্য সহজ আর মুনাফিকদের জন্য কঠিন হয়। ফজরের নামাজে হাজির হলে ঈমানদারের লক্ষণ।

২) যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল সে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল মানে হলো আল্লাহ তা'আলা তার সম্পন্ন নিজেই মেনে নিলেন।

৩) যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালার কাছে তার জন্য সাক্ষ্য দেয় এবং সুপারিশ করে।

৪) যে ব্যক্তির ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল আল্লাহ তায়ালা, তার আমলনামায় সারারাত নফল নামাজ আদায় করার সওয়াব দান করেন।

৫) যে ব্যক্তি নিয়মিত জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে আল্লাহতালা কিয়ামতের দিন তার জন্য আলাদা ভাবে আলোর ব্যবস্থা করে দেয়।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের এই পর্বটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। তাহলে অবশ্যই জানতে পেরেছেন ফজরের নামাজের ১০ ফজিলত সম্পর্কে। আজকের এই পর্ব যদি আপনার কোন উপকারে লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।


পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url