বাংলাদেশে মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশের মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। এই মাদকাসক্তি সম্পর্কে যদি এখনই আমরা সচেতন না হয় তাহলে আমাদের বর্তমান ভবিষ্যৎ সব নষ্ট হয়ে যাবে। মাদকাসক্তির অস্বাভাবিক আচরণ পুরো একটি দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই কিভাবে এই মাদকাসক্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব।
                                                                           


বাংলাদেশের মাদকাসক্তি বর্তমানে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। কিশোর বয়সী ছেলেদের মাদকাসক্তি বেশি আসক্ত হয়েছে। নিচে আমরা আলোচনা করব মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সঙ্গেই থাকন।

ভুমিকা

 মাদকাসক্তি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাড়িঁয়েছে বর্তমানে সমাজ ও দেশের জন্য। এ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তার বিশাল থাবা বিস্তার  করেছে মাদকের নীল নেশা।এ নেশায় আজ হাজার হাজার তরুণ আসক্ত। এ অভাগা জাতির পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন অচিরে ই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে যদি না এ মরন নেশা থেকে যুবক সমাজকে রক্ষা না করা গেলে।

আরো পড়ুনঃ নিমের উপকারিতা

এই সর্বনাশা মরণ নেশার শিকার আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ।আজ তারা নি:স্ব হচ্ছে মাদকের  মরণনেশার করাল ছোবলে যে তারুণ্যের ঐতিহ্য রয়েছে যুদ্ধ জয়ের।শত- সহস্র তরুণ প্রাণ আজ মাদক নেশার যন্ত্রণায় ধুঁকছে। হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে আজ ঘরে ঘরে।মাদকাসক্তের কারণ উদঘাটন  করে অচিরেই এর প্রতিকার করতে হবে।

 

মাদকাসক্ত কি? 

একটি স্নায়ুবিক ক্রিয়া হচ্ছে মাদকাসক্ত।ব্যক্তির চিন্তা- চেতনা ও আচার- আচরণের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয় এর প্রভাবে।যুব সম্প্রদায়ের এক আদিম প্রবণতা হচ্ছে মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি। মাদকাসক্তি বলতে শাব্দিক অর্থে ড্রাগ বা মাদকদ্রব্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণকে বোঝায়। নেশা এমন একটি মানষিক বা শারীরিক অবস্থা যার সৃষ্টি হয়েছে জীবিত প্রাণী ও মাদক ওষুধের মিথস্ক্রীয়ার মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার( WHO)এর মতে।

মাদকদ্রব্য কি?

মত্ততায় জন্মায় এমন দ্রব্য হল মাদক শব্দের অর্থ।মাদকদ্রব্য বলতে নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যকেই বোঝায়।স্নায়ুবিক বিকলাঙ্গ দেখায় দেয় আর বার বার ওই দ্রব্য গ্রহণের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয় মাদক দ্রব্য গ্রহণের ফলে।এ আসক্তি কেবল মাদক দ্রব্য গ্রহণের ফলেই শুধু প্রশমিত হয়।অন্যথায় নানা ধরনের সমস্যা এবং শরীরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।মাদকদ্রব্য সম্পর্কে হযরত মুহাম্মাদ (সা:) মন্তব্য করেছেন :

"নেশা জাতীয় যেকোন দ্রব্যই মদ,আর যাবতীয় মদই হারাম"। সকল প্রকার জাতীয় দ্রব্য হারাম হওয়া সত্ত্বেও এসব দ্রব্যসামগ্রীর প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকাসক্তি হচ্ছে চিকিৎসা গ্রহণের যোগ্য নয় এমন দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রমাগত বিক্ষিপ্তভাবে গ্রহণ করা এবং এসব দ্রব্যের ওপরে  নির্ভরশীল হয়ে পড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী। 


মাদক দ্রব্যের উৎস

 মাদকদ্রব্য কমবেশি পাওয়া যায়  আধুনিক বিশ্বের প্রায় সব দেশেই।কোনো দেশে অনেক বেশি আবার কোনো দেশে অনেক কম।তিন স্থানে পপি উৎপাদিত হয়। যেমন, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল(মিয়ানমার,লাওস,থাইল্যান্ড) গোল্ডেন ক্রিসেন্ট(ইরান,আফগানিস্তান, পাকিস্তান)। এই পপি ফুলের  নির্যাস হতেই আফিম তৈরি হয় ও এ আফিম থেকেই সর্বনাশা হেরোইন উৎপাদিত হয়। 

এছাড়াও গুয়েতেমালা, জ্যামাইকা,যুক্তরাষ্ট্র,ঘানা,প্যারাগুয়ে,নাইজেরিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা, কেনিয়া ও থাইল্যান্ড সহ দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, ব্রাজিল,কলম্বিয়া প্রভৃতি দেশে মারিজুয়ানা ও কোকেন উৎপাদিত হয়।এছাড়া এশিয়া অঞ্চলে অনেক দেশেই আফিম,হেরোইন ও কোকেন উৎপন্ন হয়।


মাদকদ্রব্যের ব্যবহার পদ্ধতি

 আন্তর্জাতিকা ড্রাগ ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের মাদকে ব্যবসার জাল বুনেছে সাম্প্রতিক কালে।নানা রকমের ব্যবহার পদ্ধতি  রয়েছে এসব মাদকদ্রব্যের।ইন্জেকশনের মাধ্যমে ত্বকের নিচে গ্রহণের পদ্ধতি এবং সরাসরি রক্তপ্রবাহে অনুপ্রবেশকরণ পদ্ধতি,  ধূমপানের পদ্ধতি নাকে শোকার পদ্ধতি। হেরোইন আজ সব নেশাকেই ছাড়িয়ে গেছে বিভিন্ন রকমের ড্রাগের মধ্যে।অত্যন্ত তীব্র এর আসক্তি।এ নেশা সিন্দাবাদের দৈত্যের মত তার ঘাড়ে চেপে বসে নিছক কৌতূহল যদি কেউ হেরোইন সেবন করে।


 মাদকাসক্তির কারণ

বহুবিধ কারণ রয়েছে মাদকাসক্তির।বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্তির প্রভাব লক্ষ করা যায় আমাদের দেশে। মাদকাসক্তির অন্তরালে বিভিন্ন কারণে র কথা বলেছেন  বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসকরা। নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

হতাশা:  হতাশা হলো মাদকাসক্তির অন্যতম একটি কারণ।ব্যক্তি তার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হরিয়ে ফেলে এ হতশার কারনে।সর্বনাশা মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে সাময়িকভাবে আত্মমুক্তির জন্যে।

সঙ্গদোষ: সঙ্গদোষ মাদকাসক্তির জন্য আরেকটি মারাত্মক কারণ। এটি বিস্তার করে নেশাগ্রস্ত বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে।

কৌতূহল : মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ কৌতূহল ।অনেকেই কৌতূহল বশত মাদকদ্রব্য সেবন করে এর ভয়াবহতা জেনেও।আস্তে আস্তে নেশার জগতে পা বাড়ায়।

সহজ আনন্দ লাভের বাসনা

 মানুষ মাদককে আনন্দ লাভের সহজ উপায় হিসেবে অন্য রকম অনুভূতি অনুভবের জন্য গ্রহন করে এবং ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে।

মনস্তাত্ত্বিক বিশৃঙ্খলা

তরুণদের মধ্যে মাদক সেবনের অন্য  এটি একটি  অন্যতম কারণ। , পারিবারিক অশান্তি , প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার,পরীক্ষায় ফেল ইত্যাদি কারণে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

ধর্মীয় মূল্যবোধের বিচ্যুতি

ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষকে সচেতন করে তোলে পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। কিন্তু যদি  ধর্মীয় মূল্যবোধ বিচ্যুতি ঘটে মানুষ নিছক কারনে মাদকাসক্তে লিপ্ত ফলে মাদকাসক্তি  বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিবারের অভ্যন্তরে মাদকের প্রভাব

অনেক সময় অনেক পরিবারে পিতা- মাতার মাদক নেশার অভ্যাস থাকে। ফলে সন্তানও সহজেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।মোট কথা হতাশা, আদর্শহীনতা, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্তিরতা, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে মাদকাসক্তির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাদকাসক্তির কুফল

মাদকাসক্তি এক ধরনের মরণ নেশা। মৃত্যুই তার একমাত্র গন্তব্যস্থল। মাদক গ্রহণ ধীরে ধীরে স্নায়ুকে দুর্বল করে তোলে। শরীরের রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে নিঃশেষ করে দেয়। তাছাড়া ক্ষুধা ও যৌন অনুভূতি হ্রাস ঘটায়। মাদক গ্রহণে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। 

রাগান্বিতভাব, নিদ্রাহীনতা, উগ্র মেজাজ, ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতায় ক্ষতিকর প্রভাবসহ মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে এইচআইভি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এককথায় মাদকাসক্ত মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

মাদকাসক্তির প্রতিকার 

জনগনের মধ্য সচেনতা বৃদ্ধি ও বাংলাদেশ মাদকাসক্তির প্রতিকার আন্দোলনের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি হচ্ছে। আধুনিক (আমরা ধূমপান নিবারণ করি) সংস্থাটি মাদক নিরাময় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইত্যাদি গণমাধ্যমগুলোও সব সময় মাদক নিরাময়ে কাজ করছে। তারা সবসময় মাদকাসক্তির ভয়ানক পরিণাম নিয়ে বিভিন্ন  পোস্টার,ব্যানার,নাটকপ্রচার করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। 

এছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এবং এগুলোর  কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।  অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতি বছর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে২৬ জুন মাদকদ্রব্যের পাচার,নিষিদ্ধ ও অপব্যবহারবিরোধী দিবস পালন করে আসছে।বাংলাদেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং মাদক সরবরাহকারীদের কঠিন শাস্তি ও বর্ডার এলাকায় কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।


উপসংহার

মাদকের কুফল নিয়ে জনগণের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সভ্যতার এই আধুনিক যুগে মাদকাসক্তির ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর সম্ভবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এর প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলছে। 

মাদক প্রতিকারে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মাদকের হিংস্র থাবায় হারিয়ে যাবে আমাদের দেশের উজ্জ্বল সম্ভবনাময় ভবিষ্যৎ। তাই মাদক প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সামাজিক প্রতিরোধ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা উচিত এবং মাদকের ব্যবসা, বিক্রি, সরবরাহ কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url