শীতের পিঠা পুলি

শীতকাল কম বেশি প্রায় সবাই পছন্দ। ঠান্ডা ঠান্ডা মৌসুমে ঘুরে বেড়াতে সবারই ভালো লাগে। বেশিরভাগ মানুষেরই শীতকালটা অবসরে কাটে। ঘরে বসে থেকে মনে হয় কি করব কি করব। তখন হঠাৎ করে মনে পড়ে পিঠার কথা। তারপর পিঠা বানিয়ে পরিবারের সবার সাথে জমিয়ে পিঠা খাওয়া হয়।

শীতকালটা ভালো লাগার কারণ মূলত এই পিঠাপুলি। শীতকালে বেশি পিঠা পুলি বানানো হয়।কারন এই সময় প্রায় সবার মনে থাকে আনন্দ।শীতকাল যে প্রায় সবার পছন্দ তা কিন্তু নয়। অনেকের অপছন্দ বটে। কারণ শীতকালে প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই গোসল করতে আলসে লাগে।
ভুমিকা

শীতকালে কেন এত পিঠাপুরি বানানো হয়ঃ

শীতকালটা মূলত ছুটির সময়। এই সময়ে প্রায় সবারই পরীক্ষা শেষে ছুটি কাটায়। তারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতেও যায়। এই সময় মানুষ বেশি বেড়াতে যায় কারণ সারা বছর প্রায় সবারই কাজ বেশি থাকে। আর শিক্ষার্থীরাও এই সময়ে ছুটি কাটাতে পারে। তারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায় যেমনঃ দাদুর বাড়ি, নানুর বাড়ি ইত্যাদি জায়গায়। 

যখন তারা বেড়াতে যায় তাদের গ্রামের বাড়িতে তখন তাদের আপ্পায়ন করার জন্য তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠা পায়ে আরো অনেক কিছু।এই কারনেও মুলত এই সময় পিঠাপুলি বেশি বানানো হয়।এছাড়াও শীতকালেই কৃষকের ঘর ভরে ধান উঠে। নতুন ধান ওঠার খুশিতে তারা উৎসবে মেতে ওঠে। তারা সেই ধান থেকে আটা তৈরি করে। 

তারপর নতুন আটা দিয়ে তৈরি করা হয় নানা রকমের পিঠা পুলি।আরও একটি কারণ রয়েছে শীতকালে পিঠাপুলি বেশি বানানোর। এই সময় পাওয়া যায় খেজুরের রস। এই ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র শীতকালে পাওয়া যায়। তাই শীতকালে খেজুরের রসের অনেক চাহিদা রয়েছে। এরপর খেজুরের রস থেকে তৈরি হয় খেজুরের গুড়। যা প্রায় সবার কাছেই প্রিয়। 

আর এই খেজুরের গুড় দিয়েও তৈরি হয় নানা রকমের পিঠা বলি। খেজুর পিঠাপল্লীর স্বাদ আরো বাড়িয়ে তোলে। এই কারণেই মূলত খেজুরের রস ও গুড়  প্রায় সবার কাছেই প্রিয়। 

উপরোক্ত এসব কারণে। শীতকালে বেশি পিঠা বানানো হয়। আর তাছাড়াও  গরম গরম পিঠা খার মজাই আলাদা।

শীতকালের জনপ্রিয় কিছু পিঠার নামঃ

শীতকাল পিঠা  প্রধান মৌসুম। কারণ এই সময়ে অন্য সময় থেকে একটু বেশি পিঠাপুলি বানাতে দেখা যায়। এ পিঠাগুলোর কদর রয়েছে গোটা বাংলাদেশেই। 

এক এক জায়গায় এদের একেক নাম। কিন্তু দেখতে ও খেতে একই রকম। পিঠাপুলি যে শুধু গ্রামে বেশি বানানো হয় তা কিন্তু নয়। গ্রামের পাশাপাশি শহরেও পিঠাপুলে অনেক পরিমাণে তৈরি হয়। এই সব পিঠাপুলের চাহিদা মেটাতে রাস্তার ধারে ধারে বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠ। 

শুধু রাস্তা ধরে এসব পিঠা তৈরি করা হয় না । শীতকালের পিঠা গুলো এতই জনপ্রিয় হয়েছে যে এখন বিভিন্ন ধরনের  বড় বড় হোটেলও এসব পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলোর মধ্যে রয়েছে এই পিঠাপুলি।এটাও একটি ঐতিহ্যবাহী জিনিস। বাংলাদেশ পিঠাপুলির জন্য অনেক বিখ্যাত।

আমাদের বাংলাদেশে প্রায় বাইরের দেশ থেকে অনেক অতিথিরা ঘুরতে আসেন। তাদের কাছেও আমাদের বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলো অনেক ভালো লাগে। তারা এসব পিঠা পড়ে খেলা অনেক সুনাম করে গেছেন বাংলাদেশের।

শীতকালের কিছু জনপ্রিয় পিঠার নাম ও কিভাবে করতে হয় সেইগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ

১।ভাপা পিঠা

 এই পিঠাটা মূলত গরম পানির ভাপে তৈরি করা হয়। এই কারণে মূলত এপিঠাকে ভাপা পিঠা বলা হয়। এটি তৈরি করা হয় চালের গুঁড়ো, খেজুরের গুড় ও নারকেল দিয়ে।এই পিঠাটা দেখতে যেমন সুন্দর লাগে, তেমন খেতেও অনেক সুস্বাদু। 

২।চিতই পিঠা 

এই পিঠার জনপ্রিয়তা সব জায়গায়। শহর কিংবা গ্রামেসব জায়গায় এর কদর রয়েছে । আর এই পিঠাটি প্রায় সবাই পছন্দ করে থাকে। এটি সে ছাড়া অন্যান্য মৌসুমে পাওয়া যায়। তবে শীতকালে এ পিঠার চাহিদা একটু বেশি। এ পিঠা ঝাল কিংবা মিষ্টি দুই রকমই খাবারের সাথে খাওয়া যায়। এই পিঠা তৈরি করা হয় চালের গুঁড়ো দিয়ে। আর সেই সঙ্গে পানি মিস করে দিয়ে দিতে হয়। এই পিঠা খাওয়ার জন্য তৈরি করা হয় পেমেন্ট ধরনের ঝাল মিষ্টি চাটনি। 

৩।দুধ চিতই

চিতই পিঠা কে আবার দুধে ভিজিয়ে বানানো হয় দুধ চিতই। দুধ চিতই করার জন্য এ পিঠাকে আকারে কিছুটা ছোট করি নেওয়া হয়। এরপর দুধ ও গুড়ের মিশ্রণে সেই ছোট চিতই গুলো ঢেলে দেয়া হয়। এরপর কয়েক ঘন্টা এগুলোকে ভালো করে ভিজতে দেওয়া হয়। যেনো দুধের মিশ্রণগুলো ভালোভাবে চিতই পিঠার মধ্যে ঢুকতে পারে।

৪।পুলি পিঠা

এই পিঠার বিভিন্ন ধরনের রয়েছে।যেমনঃদুধপুলি, সিদ্ধ ইত্যাদি আরো নানারকম ভাবে তৈরি করা হয়। এই পিঠা মিষ্টি আবার ঝাল দুই রকমই হয়ে থাকে। এটাও একরকম নকশা করে করতে হয় । আপনারা চাইলেই ঝাল বা মিষ্টি করতে পারবেন। এটা করার জন্য প্রথমত হয়ে আটার ডো গোল করে কেটে নিতে হয়। এরপরে এখানে ঝাল কিংবা মিষ্টি তৈরি করা খাবারটি সেখানে দিয়ে। মুড়িয়ে নকশা করলে তৈরি পুলি পিঠা। আর এই পিঠাকে দুধে ভেজালে এটি হয়ে যাবে দুধ পুলি।

৫।পাটিসাপটা 

জনপ্রিয় পিঠাগুলোর মধ্যে একটি হল পাটিসাপটা। যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি খেতে অনেক সুস্বাদু। শীতকালে এই পাটিসাপটা পিঠা অনেক চল রয়েছে। পাটিসাপটা পিঠা করতে হলে চিতই পিঠার মতনই চালের গুরুদে পানির মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এরপর খিরসা বানিয়ে নিতে হবে। একই সাথে আপনারা চাইলে গুরু ব্যবহার করতে পারেন। খেজুর ব্যবহার করার ফলে পিঠাটি আরো সুস্বাদু হয়ে ওঠে। এরপর চালের মিশ্রণটি চিতই পিঠের মতো নিয়ে পাতলা রুটির মত করে দিতে হবে। এরপর সেখানে দুধ ও গুড়ের খিরসা দিয়ে দিতে হবে। দেওয়ার পর ওইটাকে মুড়িয়ে নিয়ে। কিছুক্ষণ ভেজে নিলেই তৈরি পাটিসাপটা।

৬। নকশী পিঠা

এই পিঠার নাম নকশি রাখা হয়েছে কারণ। এই পিঠাটি অনেক রকম নকশার মাধ্যমে করা হয়। এই পিঠার জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে এর অসাধারণ নকশা। আর এ নকশার কারণে এ পিঠার নাম রাখা হয়েছে নকশি পিঠা। এ পিঠাটি করতে হলে রুটি করার জন্য আটাতে যেমন গরম পানি মিশ করতে হয় সেরকমই করে নিতে হবে। এরপর সেগুলোতে নকশা করে নিতে হবে। নকশা করে নেওয়ার পর সেগুলোকে তেলে ভেজে নিতে হবে। এভাবে দুইবার তেলে ভেজে নিতে হবে। তারপর খেজুরের গুড়ের শিরায় ডুবাতে হবে। তাহলেই তৈরি নকশি পিঠা।

শেষ কথা

শীতের পিঠাপুলি বাঙালি জাতির সংস্কৃতিতে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীত আসলে প্রত্যেকটি বাড়িতে শীতের পিঠার খাওয়ার ধম পড়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আজকের এই আর্টিকেলটি লিখেছি। আশা করছি আপনাদের অনেক উপকারে লাগবে এবং আজকের পরে আপনি নিজে নিজে ঘরে বসে তৈরি করতে পারবেন শীতের বিভিন্ন রকমের পিঠা। আজকের আর্টিকেল যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে শেয়ার করবেন।


পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url