কলা গাছ কোন নিয়মে চাষ করলে দুর্দান্ত ফলন হবে

কলা প্রায় সকলেরই ভালো লাগে। এগুলো ভালো লাগার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কলাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। শুধু তাই নয় ত্বকের যত্নেও কলার অনেক গুণ রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের মাটির উর্বরতা অন্যান্য দেশের মাটির তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমাদের বাংলাদেশের যেকোনো ধরনের সবজি কিংবা ফল খুব সহজে চাষ করা যায়।


আর এগুলোর ফলনগুলো অনেক ভালো হয়। আর এছাড়াও বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তারা চাষবাদ করেই নিজের অর্থ উপার্জন করে আর তার পাশাপাশি আমাদের খাদ্যের চাহিদাগুলো তারা মিটিয়ে থাকে। আর এগুলো থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো পেয়ে থাকি।

ভূমিকা

কলা আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের গুণ রয়েছে এ কলার। শুধু কলার নয় কলার খোসারও উপকারিতা রয়েছে, কলার খোসা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এগুলো ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।কিন্তু যারা এসব চাষ বিষয়ে নতুন। তারা ঠিক পদ্ধতিতে চাষ করার নিয়ম কি জানেনা। 

আর্থিক পদ্ধতিতে চাষ না করলে ভালো ফলন আসবে না। তাই চাষ করার পদ্ধতি গুলো জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন জেনে নিই কলা চাষ করার সহজ উপায়।

কলার বিচ থেকে চারা গাছ তৈরি করার উপায়ঃ

কলা গাছের চারা বিভিন্নভাবে করা যায়। একটি কলা গাছ থেকে আরেকটি কলা গাছের জন্ম হয়। আবার কলার ভেতরে যে বিচিগুলো রয়েছে সেগুলো থেকেও কলা গাছ তৈরি করা যাবে। কিন্তু অনেকে জানে না যে কিভাবে কলা গাছের চারা তৈরি করতে হয়। তাহলে চলুন দেখে নিই কলা গাছের চারা তৈরি করার উপায়। কলা ভালোভাবে চাষ করতে হলে তিনটি স্টেপ অবলম্বন করতে হবে। সে তিনটি স্টেপগুলো নিচে দেওয়া হলঃ

১।প্রথমে একটি কলা নিয়ে নিতে হবে। কলাটি একটি স্থানে অনেক দিনের জন্য রেখে দিতে হব যতক্ষণ না সে কলার খোসা গুলো কালো হয়ে যায়। কলার খোসাগুলো কালো হয়ে যাওয়ার পর দেখবেন বিচিগুলো একটু আকারে বড় হয়েছে। তাই তখনই বিচিগুলো আলাদা করে বের করে নিতে হবে। 

আনন্দ করে বের করে নেওয়ার পর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এবার অন্যদিকে একটি পানি ভর্তি গ্লাসে পেঁয়াজ কুচি করে দিতে হবে। আগে থেকে ধুয়ে রাখা কলার বিচি গুলো সে পানিতে দিয়ে দিতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ সে গ্লাসের বিচি গুলো রেখে দিতে হবে।

২।এবার অন্যদিকে বিচি গুলোর উপর করার জন্য মাটি তৈরি করতে হবে। মাটি তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি টপ অথবা বালটি নিয়ে নিতে হবে। বালটি নিয়ে নেওয়ার পর সেখানে মাটি দিতে হবে, মাটি গুলোর সাথে সামান্য পরিমাণে ভালো মেশিয়ে নিতে হবে।

আর যদি আগে থেকে সেটি বেলে মাটি হয়ে থাকে তাহলে কোন প্রয়োজন নেই। এরপর সেখানে কম্পোষ্ট কিংবা গোবর সার ব্যবহার করতে পারেন এছাড়াও বাড়িতে তৈরি করা জৈব সার ও আপনারা দিতে পারেন। এই সারগুলোতে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে মাটির সাথে। এবার সে বীজগুলোকে পানি থেকে বের করে নিতে হবে।

৩।বের করে নেয়ার পর মাটিতে রোপণ করে দিতে হবে। মনে রাখবেন খুব গভীরে রোপন করা যাবে না। হালকা একটু মাটি দে শুধু ঢেকে দিতে হবে। এবার যে পিয়াজের পানিগুলো ছিল সেগুলো সে মাটিতে দিয়ে দিতে হবে। এবার এক সপ্তাহ পর দেখবেন, মাটি থেকে ছাড়া বের হয়ে গেছে।  

আরও দুই সপ্তাহ পর, মাটিতে গাছ লাগানোর জন্য সেগুলো উপযোগী হয়ে উঠবে। সে মাটিতে লাগানোর জন্য, প্রথমে মাটিটিকে ভালো করে ঝরঝরা করে নিতে হবে। এরপর সেখানে কম্পোস্টিং বা গোবর সার মিক্স করতে হবে। এরপর রোপণ করে দিতে হবে। আর এই গাছ থেকে অনেক ভাল ফলন আসবে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। কারণ এতে দেওয়া যে পেঁয়াজের পানি গুলো রয়েছে এগুলো গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারি।

কলা গাছ কোন নিয়মে চাষ করলে দুর্দান্ত ফলন হবেঃ

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই চাষ করে তাদের অর্থ উপার্জন করে। তাদের অর্থ উপার্জন করার পাশাপাশি আমাদের খাবারের চাহিদাগুলো পূরণ করে থাকে। তেমনি এক ধরনের পুষ্টিকর খাবার হলো কলা। এটি আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

শুধু তাই নয় এর আরো উপকারিতা রয়েছে। অনেক কৃষকেরা কলা চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু যারা চাষ বাদে নতুন তারা চাষের এই সকল পদ্ধতির জানেন না। ঠিক পদ্ধতিতে চাষ না করলে ফলন ভালো হয় না। তাই সঠিক চাষের পদ্ধতি অবশ্যই জানা প্রয়োজন।কলা গাছ চাষ করার পূর্বে ভালো জমি নির্বাচন করতে হবে। 

কলা চাষ করার জন্য এমন জমি নির্বাচন করা উচিত যে জমির আশেপাশে খুব একটা বড় গাছপালা নেই। আর খুব সহজেই সেই জায়গাতে রোদ পৌঁছাতে পারে। এরপর ট্রাকটার দিয়ে মাটিগুলো ঠিক করে নেওয়ার পর মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। সমান করে নিয়ে একটা সোজা দাগ টেনে নিতে হবে এবং সেই দাগ বরাবরই কলা গাছ রোপন করতে হবে। 

আর আগে থেকে বলে রাখছি এক একটা কলা গাছ পাঁচ হাত দূরে কলা গাছ লাগাতে হবে। কারণ পাছাত পর পর কলা গাছ লাগালে কলা চাষ অনেক ভালো হবে।প্রতিমাসে একবারের জন্য হলেও সর্ষের খোল দিতে হবে। কারণ এগুলো গাছে দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অনেক সাহায্য করে। গাছ যত বৃদ্ধি হবে গাছের ফল ও না তত বৃদ্ধি হবে। 

তাই এটি গাছের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এখন কথা হল গাছে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় সে সকল সমস্যা দূর করার জন্য কোন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। কার্বমেন এডামা। এটি প্রতিমাসে গাছের চারপাশে ছিটিয়ে দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে যদি সেচ দেওয়ার আগে এগুলো গাছে চারিপাশে ছিটিয়ে দেন। 

তাহলে গাছের যে সকল নষ্ট হওয়ার সমস্যা গুলো থাকে সেগুলো দূর হয়ে যাবে। আর গাছের ফলন অনেক ভালো হবে।

কলা গাছ কয়বার ফলন দেয়ঃ

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা এখনো পর্যন্ত জানে না যে কলা গাছ কয়বার ফলন দেয়। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে কলা গাছ একবারে ফলন দেয়। এরপরে আর কোন ফলন দেয় না। কলা গাছ একবার ফল দিয়ে মারা যায়। তাই কলা গাছে একবার ফলন দেওয়ার পর সেগুলোকে কেটে ফেলা হয়। 

কারণকেটে ফেলা পর সেখান থেকে আবার কলা গাছের জন্ম হয়। আর এভাবে মূলত মানুষেরা কলা গাছ চাষ করে থাকে। এছাড়াও কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা যায়। কলা গাছের ফলন দিতে অন্তত দশ মাস সময় লাগে। দশ মাসের মধ্যে একবারে কলা গাছ ফলন দেয়। অর্থাৎ ধরা যায় যে বছরে একবারই কলা গাছের ফলন হয়।

কলা গাছে কোন ধরনের সার ব্যবহার করা উচিতঃ

আপনারা গাছের ভালো ফলন পেতে চাইলে, অবশ্যই সে গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ বর্তমানে গাছের সার না প্রয়োগ করলে। গাছের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। আপনারা চাইলে বাইরের কোন সার ব্যবহার না করে বাড়িতে তৈরি করা জৈব সার ব্যবহার করতে পারেন। জৈব সারের মধ্যে সবথেকে ভালো হবে যদি আপনারা গোবর সার ব্যবহার করে। 

এটি গাছের জন্য অনেক উপকারী কারণ, এগুলো মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি গাছের ভালো ফলনের জন্য এগুলো অনেক উপকারি। কলা গাছ দ্রুত বৃদ্ধি করত সাহায্য করে। পরে কলা গাছের ফলনটা অনেক দ্রুত হয়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার সম্পূর্ণরূপা পড়েছেন এবং জানতে পেরেছেন কলা গাছ কোন নিয়মে চাষ করলে দুর্দান্ত ফলন হবে। যদি আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে শেয়ার করবেন।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url