২০২৪ সালের শবে মেরাজ কবে - মেরাজ শব্দের অর্থ কি

নিজগৃহে  নিদ্রাচ্ছন্ন হুজুর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এমন সময় জিবরীল আলাইহিস সালামের আগমন বুখারীর হাদিসে বর্ণিত আছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আমার ঘরের ছাদ ফাক করা হলো তখন জিব্রাইল অবতরণ করেন।

এবং বুখারীর অন্য হাদিসে বর্ণনা করা হয় আমি নিজ গৃহে শুয়ে ছিলাম তখন জিব্রাইল আলাইহিস সালাম নবীজির কাছে আসেন এবং কাবা ঘরের মধ্যে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন তারপর বাকি ঘটনা ঘটে।

মেরাজ শব্দে অর্থ কিঃ

মেরাজ শব্দের অর্থ সিঁড়ি। আর এর ফারসি অর্থ হলো উর্ধ্ব জগতে আরোহন। মক্কা মোয়াজ্জেম থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত পবিত্র ইসরা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পবিত্র হাদিসে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুনথা পর্যন্ত ঘুগণিত হওয়া ও আসছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার ঘটনাকে মেরাজ বলা হয়।

পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তের দশম বর্ষে রজত মাসের ২৬ দিবা গতরাত্রে ২৭ রজত তার পেয়ারা হাবিব মোহাম্মদ সাঃ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা বলার জন্য জিব্রাইল ফেরেশতার মাধ্যমে সিওর সাম্যের উপস্থিত করে তারই নাম হল মেরাজ।

শবে মেরাজের ঘটনাঃ

শবে মেরাজের সম্বন্ধে হযরত মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন যে, রজব মাসের 26 দিবাগত রাত্রে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এমন সময় জিব্রাইল ও মিকাইল ফেরেস্তা দ্বয় আমাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করলেন। এরপর আমাকে জমজম কূপের নিকট নিয়ে যাওয়া হলো এবং আমার বক্ষ স্থান থেকে পর্যন্ত নাভি পর্যন্ত দিদি না করে আমার হৃদয় বের করে আনলেন এরপর জমজম কূপের পানিতে আমার হৃদয়কে উত্তমরূপে ধৌত করলেন, পুনরায় যথাস্থানে স্থাপন করলেন। 

এবং তার সঙ্গে ঈমান, জ্ঞান আরো বিভিন্ন জিনিস যোগ করে বক্করস্থল সেলাই করে দিলেন। আমি স্বচক্ষে তাদের কার্যক্রম দেখছি। কিন্তু তাতে আমার কোন ধরনের কষ্ট অনুভব হলো না।তারপর আমি অজু করে মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়লাম। এরপর বাহিরে এসে দেখলাম মসজিদের দরজার সামনে অদ্ভুত একটি প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে। 

আমি তখন ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কি। জিব্রাইল আলাই সাল্লাম আমাকে বললেন, এটা আল বরাব এটার ওপর চেপে আপনি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে যাবেন। আপনি এই বরাকের উপর আরোহন করুন। তখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম কি যেন একটা চিন্তা করে চোখের অশ্রু ফেলতে শুরু করলেন। 

এমন সময় আল্লাহ তরফ থেকে বাড়ি আসলো। হে জিব্রাইল তুমি আমার পেয়ারা হাবিবকে জিজ্ঞেস করো কেন তিনি বোরাকে আরোহন করছে না এবং তার কান্নার কারণ কি। তখন জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কাঁদছেন কেন।

এবার জিব্রাইল আল ইসলামের প্রশ্নের উত্তরে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে জিব্রাইল আজ আল্লাহ তাআলা আমার জন্য বরাত পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমি চিন্তা করছি যে কেয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতগণ ক্ষুধায় পিপাসায় কাতর হয়ে উলঙ্গ অবস্থায় কবর থেকে উঠে হাশরের মাঠে গমন করবে তখন, কিভাবে ৫০ হাজার রাস্তা পায়ে হেঁটে হাঁসের ময়দানে উপস্থিত হবে এবং কিভাবে ৩০ বছরের পুলসিরাতের রাস্তা পার হবে।

এই মহা আনন্দের সময় প্রিয় নবী তার উম্মতের কথা ভোলেননি। এজন্য তাকে শাফিউল মুজলিমিন ওয়া রাহমাতুল্লাহি আলামিন, এ মহাসম্মানজনক উপাধি দেওয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ তরফ থেকে বানি আসলো সূরা মারিয়াম আয়াত নাম্বার ৮৫ হে নবী আপনি নিশ্চিত হন আল্লাহ ভীরু ও আপনার উম্মতগণকে কিয়ামতের দিন  এরূপ স্বর্গীয় অর্শ প্রদান করা হবে। তারা তথায় মেহমানদের নেয় সম্মান ও অভিনন্দন লাভ করবে। 

এবং বোরাকে আহরণ করে তারা পুলসিরাত পার হবেন। এরপর তিনি যাত্রা শুরু করলেন। বোরাকের গতি এত দ্রুত যে, বিদ্যুতের গতি ও তার কাছে তুচ্ছ মনে হবে। সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু বিশেষ বিশেষ স্থানে তিনি দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি সে স্থানগুলোতে গমন করার সময় একজন ব্যক্তির সাথে তার দেখা হয় এবং তিনি তাকে সালাম করে উধাও হয়ে যান। 

তখন হযরত মুহাম্মদ সাঃ জিব্রাইল আলাইহে আঃ কে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কে ছিল আর তিনি কেনই বা অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তখন জিব্রাইল আঃ উত্তরে বললেন, যুবকটি প্রকৃতপক্ষে কোন মানুষ নয়। তিনি মানুষ রূপে ইসলাম ধর্ম আপনাকে সাধুসন্মোচন জানাতে তিনি এসেছিলেন।

তিনি প্রথম আসমানে গিয়ে হযরত আদম আলাই সাল্লাম কে দেখতে পান।এভাবে তিনি একের পর এক আসমান পার হতে থাকেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় আসমানে গিয়ে হযরত ঈসা আঃ কে দেখতে পান। এরপর তিনি ধীরে ধীরে সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেলেন। সপ্তম আসমানে পৌঁছে তিনি সিদরাতুল মুনতাহা দেখতে পেলেন। 

এর ফল গুলো অনেক বৃহৎ এবং পাতাগুলো হাতের কানের মত। তখন জিব্রাইল আলাই সাল্লাম বলেন এটি হলো সিদরাতুল মুনতাহা।  এরপরে জিব্রাইল আলাই সালাম তাকে বেহেস্ত এবং দোযখ দেখালেন। কাজের জন্য মানুষেরা বেঁচে যেতে পারবে এবং দোযখের আজাব সমূহ সকল বিষয়ে  নবীজিকে বলতে থাকলেন। 

এরপর আবার রওনা শুরু করলেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পর যাওয়ার পর জিব্রাইল আলাই সাল্লাম বলেন আমার আর সামনে যাওয়ার শক্তি নেই। অতএব তারা নবীজির কাছ থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু তখন নবীজি বললেন এতদূর পথ আসার পর আমি কি আমার বন্ধুকে ছেড়ে চলে যাব। তখন জেব্রা আলাই সালাম বললেন, আমি যদি আর সামনে যাই তাহলে নূরের আলোয় পুড়ে যাব।

এরপর তিনি এমন একটা স্থানে পৌঁছে গেলেন যেখানে আশেপাশে কোন শব্দ নেই।  এমন সময় রাফরান নামক একটি বাহন আসলো। তিনি তাতে আরোহন করে যেতে শুরু করলেন। এরপর সে বাহনে চড়েই তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছে গেলেন।

শবে মেরাজের ফজিলতঃ

শবে অর্থ রাত এবং মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্ব গমন। এই শবে মেরাজ মুসলমানদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনেই মুসলমানদের জন্য নামাজ ফরজ করা হয়েছিল। এবং এই দিনে পাঁচবার নামাজ আদায়ের বিধান নিয়ে এসেছিল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম। এ কারণে মুসলমানদের কাছে মে আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। 

কিন্তু নবী মেরাজের পর কোন সাহাবীদের এই দিবসটি পালন করতে বলেন এবং তিনি নিজেও কখনো পালন করেনি। তাই 27 রজবে প্রচলিত ইবাদত বন্দিগি দিনের অংশ মনে করা এবং সুন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হাতের সম্মত নয়। বরং এসব কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখা ভালো।

তবে এটি অনুধাবন করতে হবে যে,  এই মেরাজের দিনে আল্লাহ তা'আলাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দিয়েছিলেন। তাই সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। তবে অন্যান্য দিনের মতো এই দিনে নফল ইবাদত করার কোন বাধা নেই। কারণ এই রজব মাস এবাদতের একটি ভালো মাস। এ মাসে নবী করিম রোজার জন্য প্রস্তুতি নিতেন।

২০২৪ সালের শবে মেরাজঃ

শবে মেরাজের আসল দিন সম্পর্কে কোন হাদিসে দেওয়া না থাকলেও, প্রায় সকল মুসল্লীরা রজব মাসের ২৭ তারিখে শবে মেরাজ দিবসটি পালন করেন। দিনের বেলা রোজা এবং রাতে নফল নামাজ পড়ে তারা এই দিনটিকে পালন করে থাকেন। ২০২৪ সালের শবে মেরাজ  অর্থাৎ রজব মাসের ২৭ তারিখ হল ৮ই ফেব্রুয়ারি। তাই এই বছর ৮ই ফেব্রুয়ারি সবে মেরাজ দিনটি পালন করা হবে।

শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

শবে মেরাজ, ইসলামের একটি মহৎ ঘটনা, নবী মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনের একটি অমূল্য অধ্যায়। মেরাজে, প্রণতির মাধ্যমে, নবী (সা:) বুরাক দ্বারা আকাশে উঠে এসে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত্কার করেন। এই ঘটনা ইসলামী ক্যালেন্ডারের ২৭ রজব মাসে ঘটে এবং ইসলামি ইতিহাসের অনুসন্ধান হিসেবে মুহাম্মদ (সা:) কে মানবতার সর্বোচ্চ পথিকৃত হিসেবে গণ্য হয়েছে। 

মেরাজ এ নবী (সা:) কে সারা কোসমের মুক্তির আগে দেখা হয়েছে এবং তার জন্য আল্লাহ তাকে সকল প্রকার আমলের মাধ্যমে আমল করার আদান-প্রদান দেন। মেরাজ বাংলা ভাষায় 'উচ্চস্তরে উঠার' অর্থে আসে, এবং এটি মুসলিমদের জীবনে আত্মনিবর্তনের একটি নিন্মিষ্ঠ উদাহরণ।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url