বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ - আখেরি মোনাজাত

গাজীপুরের টঙ্গের তুরাগ নদীর তীরে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে শুরু হবে ৫৭ তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ৪ই ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই পর্ব। ৯ থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা।

আজকের পর্বে আমরা জানবো বিশ্ব ইজতেমার ২০২৪ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সঙ্গে থাকুন। আরো জানবো আখেরি মোনাজাত ও তাবলীগী সম্পর্কে।

ব্যুতপত্তিগত অর্থঃ

বিশ্ব ইজতেমা নামে দুইটি শব্দের প্রথম টি হল বাংলা, আর দ্বিতীয় টি হল আরবি শব্দ। ইজতেমা শব্দের অর্থ সম্মেলন। এর বানানানুগ উচ্চারণ ইজতেমা। বাংলায় ইজতেমা অথবা এজতেমা লেখা হয়। বিশ্ব ইজতেমা হল বিশ্ব সভা, বিশ্ব সম্মেলন, আন্তর্জাতিক সমাবেশ তথা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স।

পরিভাষায় বিশ্ব ইজতেমা হল দেওবন্দী ঘরানার অন্তর্গত মাওলানা ইলিয়াস(রহ) প্রবর্তিত কালেমা, নামাজ, ইলম ও জিকি্র, ইকরামুল মুসলিমিন,তছহিহে মেয়াদ ও তাবলীগ-এই ছয় মূলনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত তাহিকুস সালাত। বা নামাজ আন্দোলন নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে তাবলীগ জামাত নামে পরিচিত মসজিদকেন্দ্রিক দাওয়াতে কর্মধারায় বার্ষিক কর্মশালা বা সমাবেশ।

বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমাঃ

১৯৪৬ সালে মাওলানা আব্দুল আজিজ এর প্রচেষ্টায় ঢাকায় কাকরাইল মসজিদে বার্ষিক ইজতেমা আয়োজিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন তাবলীগের বিশ্ব আমের মাওলানা ইউসুফ কান্ধল্ভিও। মাওলানা আব্দুল আজিজ ছিলেন বাংলাদেশ তাবলীগ জামাতের প্রথম আমির। 

১৯৪৮সালের চট্টগ্রামের তৎকালীন হাজী ক্যাম্পে দ্বিতীয়বারের মতো তাবলীগের সম্মেলন বা ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছিল। দশ বছর পর ১৯৫৮ সালে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে ঢাকার রমনা উদ্যানে অনুষ্ঠিত ইজতেমায় ছিল প্রথমবারের মতো বড় পরিসরের আয়োজন। 

মুসল্লী ও অনুসারী দ্রুত বাড়তে থাকায় ১৯৬৭ সালের রমনা পরিবর্তে গাজীপুরে টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে পাকা গ্রামের খেলার মাঠে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় বার্ষিক ইজতেমার। স্বাধীনতার পর১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গির তুরাগ নদীর তীরবর্তী সাল বৃষ্টি না অসবিশাল পাড়ার গ্রামের মাঠ তাবলীগ জামাতের বাৎসরিক ইজতেমার জন্য বরাদ্দ করে দেন। 

১৯৮০ দশকের পাকিস্থানে লাহোরের কাছে রাইভেন্ট শহরে ও ভারতের ভূপালের বড় ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এই দুই ইস্তেমার চেয়ে টঙ্গীর ইজতেমা বেশি মুসল্লির যোগ দিলে তা পরবর্তীতে বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিত পায়।

সময়কালঃ

প্রথম থেকে এ বিশ্ব ইজতেমার শনি, রবি ও সোম এই তিন দিন অনুষ্ঠিত হতো। সোমবার জোহরের আগে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটতো। কার্যত দেখা যেত, অধিকাংশ লোক শুক্রবার জুম্মার আগেই চলে আসেন, এতে তিন দিনের ইজতেমা চার দিনে গিয়ে গড়ায়। তাই পরবর্তী সময়ের সুবিধা বিবেচনায় শুক্র-শনি ও রবি করা হয়। 

বিশ্ব ইজতেমা এ ক্রমবর্ধমান লোক সংখ্যার কারণে ২০১১ সাল থেকে ইজতেমাকে ২ পর্বে বিভক্ত করা হয়। নির্ধারিত 32 জেলার লোক অংশগ্রহণ করেন। এ তো সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান না হয় ২০১৬ সাল থেকে ৩২ জেলার পুনরায় দুই ভাগে বিভক্ত করে এক বছর পর পর ১৬ জেলার লোক অংশগ্রহণ করার পদ্ধতি চালু করা হয়। 

32 জেলার লোক অংশগ্রহণ করে এবং পরবর্তী বছর গ্রহণ করার সুযোগ পায়। এছাড়া যে সকল জেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না তাদের জন্য জেলার ভিত্তিক আঞ্চল ইজতেমার ব্যবস্থা করা হয়।

আখেরি মোনাজাতঃ

আখে অর্থ শেষ, আখেরি অর্থ শেষের মোনাজাত মানে দোয়া বা প্রার্থনা। আখেরি মোনাজাত অর্থ সমাপনী দোয়া বাজে দোয়ার মাধ্যমে অধিবেশন সমাপ্ত করা হবে। ঢাকার তুরাগ দিয়ে টঙ্গী ময়দানে তাবলীগ জামাতের তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিনে মোনাজাত করা হয় তাকে মূলত আখেরি মোনাজাত নামে ধরা হয়।

দাওয়াত ও তাবলীগঃ

দাওয়াত অর্থ আহবান এবং তাবলীগ অর্থ পৌঁছানো। শান্তির ধর্ম ইসলামে অনুপম আদর্শের প্রতি মানুষকে ডাকায় হল দাওয়াত। অর্থাৎ ইসলামের পথে ডাকার নাম কে বলা হয় দাওয়াত। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা ডাকো তোমাদের রবের প্থে, হেকমত এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে(সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ১২৫)। 

ইসলামের সহজ সরল ও যৌক্তিক বিষয়গুলো মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার নামেই হল তাবলীগ। দাওয়াতে তাবলীগের মূল কাজ হলো অমর বিল মারুফ(সৎ কাজের আদেশ) ও নাহি আনিল মুনকার(মন্দ কাজে নিষেধ)। এখান থেকে ছয় গুনে বহু লোক আল্লাহর দেওয়া জান, মা্‌ল, সময় নিয়ে আল্লাহর খুশির উদ্দেশ্যে দ্বীনি দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের জন্য এক চিল্লা অর্থাৎ ৪০ দিন, তিন চিল্লা, সাত চিল্লা, সাল ও ১০ চিল্লা এবং জীবন চিল্লার জন্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url