সফল ব্যক্তিদের দশটি অভ্যাস, যেগুলো আপনার জীবন বদলে দিতে সাহায্য করবে

আমাদের আশেপাশে আমরা তিন ধরনের মানুষ দেখতে পায় যেমনঃ গরিব, মধ্যবিত্ত, ধনী । এই তিন ধরনের লোকই আমাদের আশেপাশে আমরা দেখে থাকি। তাদের মধ্যে মধ্যবিত্ত লোকের সংখ্যা বেশি। তারা গরীব না আবার ধনী ও না। এখন কথা হল আমাদের আশেপাশে আমরা অনেক ধনী মানুষদের দেখি। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ জন্মগতভাবে ধ্বনি এবং কিছু মানুষ নিজের পরিশ্রমে ধনী হয়েছে। আসল সফল মানুষ যারা, যে মানুষগুলো নিজের পরিশ্রমে ধনী ব্যক্তি হয়েছে।


তাই জীবনে সফল হতে গেলে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। আপনার চিন্তাভাবনাগুলোকে বদলাতে হবে। আমরা যে সফল মানুষগুলোকে দেখি, তাদের জীবনে কিছু অভ্যাস রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের সফল হতে পেরেছে। তাই আমরাও যদি সে অভ্যাসগুলোকে ফলো করি তাহলে, আমরা আমাদের জীবনের সফল হতে পারব।

সফল ব্যাক্তিদের দশটি অভ্যাসঃ

আমাদের আশেপাশে অনেক সফল পরিচিত মানুষ রয়েছে, যা কিছু অভ্যাস মেনে চলে। প্রায় সফল ব্যক্তিরই কিছু অভ্যাস রয়েছে যেগুলো তাদের জীবনকে পজেটিভ প্রভাব ফেলে বলে প্রমাণিত হয়েছে। আপনারা যদি এই অভ্যাস গুলোকে মেনে চলেন তাহলে আপনার জীবনও বদলে যেতে পারে।

১।সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে, আপনাকে শান্ত এবং পজিটিভ থাকতে সাহায্য করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠলে আপনার পুরো দিনটা অনেক ভালো যাবে। কারণ সারাদিন কাজ করার জন্য আপনি অনেক এনার্জি পাবেন এবং কাজেও আপনার খুব সহজে মন বসবে। আপনার অলসতা দূর হয়ে যাবে। আপেল কোম্পানির সিইও প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে। 

তার দিন টাকে তাড়াতাড়ি শুরু করার জন্য। অনেক মানুষের ঘুম থেকে ওঠার আগেই তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে সেরে ফেলেন। যেটা থাকে কমপ্লিটমেন্টের একটা অনুভূতি পেতে সাহায্য করে এবং বাকিদিনের জন্য একটা পজিটিভ টোন সেট করে দেই। যার মাধ্যমে সে অন্য মানুষদের থেকে নিজেকে আলাদা করে এবং অন্যদের থেকে অনেক বেশি পরিশ্রমে মনে করে।

২।ব্যায়াম করা

নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে। আর আপনার শরীর যদি সুস্থ থাকে আপনার কাজে মন বসবে এবং অনেক বেশি কাজ একসাথে করে ফেলতে পারবেন। নিয়মিত ব্যায়াম আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি, আপনার সারাদিন মন ভালো রাখতে অনেক সাহায্য করবে। তাই একজন সফল ব্যক্তি হওয়ার জন্য এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩।স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া

একটা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বাকি দিনের জন্য একটা পজিটিভ টোন সেট করে দিতে সাহায্য করে। তার সাথে কাজের প্রতি ফোকাস এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ ফ্রাইট গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা আরিয়ানা হেপিংটেন মনকে আরো ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন হেলদি খাবার খেতো। 

একটা হেলদি খাবার আপনার কাজের প্রতি ফোকাস রাখতে এবং শরীরকে হেলদি রাখতে সাহায্য করে। ফলে আপনি একটি পুষ্টিকর খাবার দিয়ে দিন শুরু করে, একটি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন। হেলদি খাবার যে শুধু আমাদের সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিজেদের সাহায্য করে তা কিন্তু নয়। এটি আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের সমস্যা থেকে বাঁচাতেও সাহায্য করে। 

তাই অবশ্যই আমাদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

৪।কাজের লিস্ট তৈরি করা

একটা লিস্ট আপনাকে আপনার সময় বাঁচাতে অনেক সাহায্য করবেন। আমরা হয়তো সকলেই সময়ের মূল্য সম্পর্কে জানি। একবার সময় চলে গেলে পরে আর সে সময় কখনো ফিরে আসে না। তাই আপনার প্রতিটা সময়কে যদি ঠিকভাবে কাজে লাগাতে চান তাহলে প্রতিদিন আপনি কি কি কাজ করবেন তার একটা লিস্ট তৈরি করতে হবে। 

এটি আপনার কাজের প্রতি আরো মনোযোগ দিতে অনেক সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ ফেসবুকের সিইও সেরেন সেনভল পরের দিনের কাজের জন্য একটি টু্ডু লিস্ট তৈরি করে। যেটি থাকে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজে ফোকাস করার জন্য অনেক সাহায্য করে। আর প্রতিদিন তার কাজগুলোকে সম্পূর্ণ করার জন্য সাহায্যও করে। 

যেটা আপনাকে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে অনেক সাহায্য করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে বেশি প্রায়োরিটি দেওয়ার জন্যও সাহায্য করবে। একজন সফল ব্যক্তি হতে হলে, সময়ের মূল্য দিতে শিখতে হবে। আর সময়ের মূল্য দেওয়ার জন্য এই উপায়টি আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।

৫।স্ক্রিন টাইম সীমিত করতে হবে

স্ক্রিন টাইম সীমিত করার মাধ্যমে, টেনশন মুক্ত ভাবে কাজ করাতে পারবেন। এছাড়াও ট্রেন টাইম সীমিত করার মাধ্যমে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতেও আপনি ফোকাস করতে পারবেন। উদাহরণস্বর টুইটারের সিইও জ্যাকডরসি তার ডিসট্রাকশন কমাতে, ট্রেন টাইমকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেন। 

আপনি আপনার হাতের কাজটিকে আগে করে ফেলুন। এটি আপনাকে আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে। এছাড়াও স্ক্রিন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো নয়। এতে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আইসক্রিম টাইম কমানোর মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের প্রতি মনোযোগীও হতে পারবেন এবং আপনার স্বাস্থও ভালো থাকবে।

৬।কৃতজ্ঞ থাকতে প্র্যাকটিস করা

আপনার জীবনের প্রতি যদি আপনি কৃতজ্ঞ থাকেন তাহলে, এটি আপনার যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ খুব সহজে কমাতে সাহায্য করে। এবং আপনার জীবনের প্রতিটা কাজের প্রতি মনোযোগী হতো সাহায্য করে। এটি একটি সামান্য বিষয় হলেও আপনার জীবনের জন্য অনেক মূল্যবান একটি জিনিস। উদাহরণস্বরূপ ডওয়েন জনসন প্রতিটা দিন শুরু করেন তিনটা জিনিস লিস্ট করে, যার প্রতি তিনি অনেক কৃতজ্ঞ। 

কৃতজ্ঞ থাকা প্র্যাকটিস করা আপনার মনের চিন্তাভাবনা গুলোকে নেগেটিভ থেকে পজিটিভ পরিণত করতে সাহায্য করবে। যেটি আপনার জীবনে যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে সাহায্য করবে। এছাড়া এটি আপনার মনকে সব সময় খুশি রাখতে সাহায্য করবে।

৭।মেডিটেশন

মেডিটেশন এবং মাইন্ডফুলনেস আপনার স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার পাশাপাশি। আপনার মনে একটি পজিটিভ চিন্তাভাবনা তৈরি করতে সাহায্য করবে। প্রতিটা সফল ব্যক্তিই এই মেডিটেশনের টেকনিক কাজে লাগিয়েছেন। মেডিটেশন করার মাধ্যমে আপনার কাজের প্রতি আরো মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। 

মেডিটেশনের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন, আপনি কেন এ কাজগুলো করছেন, এ কাজ থেকে কি বা পাবেন। এভাবে মেডিটেশন করার মাধ্যমে আপনার মনকে বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া মেডিটেশন আমাদের ব্রেন কে শান্ত রাখত সাহায্য করে। ব্রেনকে শান্ত রাখার পাশাপাশি এটা শরীরকে ভালো রাখতেও অনেক কার্যকরী।

৮।নতুন কিছু পড়া বা শেখা

নতুন কিছু পড়া বা শেখার মাধ্যমে আপনার নলেজ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং মেন্টালিভাবে ইমপ্রুভ করতে আরো সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা বেল গেইটস প্রতি সপ্তাহে একটি করে বই পড়েন। এমনকি অন্যদের সাথে তার বই পড়ার ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়ার জন্য নিজের বুক ক্লাব শুরু করেছিলেন। 

নতুন বই কিংবা কিছু শেখার মাধ্যমে, আপনার কাজগুলোর প্রতি আরো মনোযোগী হতে সাহায্য করে। সব সময় একই ধরনের কাজ করতে কারোরই ভালো লাগেনা। এক কাজ অনেকদিন ধরে করতে করতে সেই কাজ আর করতে মন চায় না। কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায়। তাই মাঝে মাঝে যদি কাজের ফাঁকে অন্যান্য কাজ করে থাকেন। তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে এবং আপনার কাজের প্রতি আর মন যদি হতে সাহায্য করবে।

৯।প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো

জীবনটা শুধু পরিশ্রম নয়। পরিশ্রমের পাশাপাশি কিছু খুশির মুহূর্তও তৈরি করতে হবে। পৃথিবীতে এমন অনেক ধরনের মানুষ রয়েছে যারা, কাজের থেকে ইনজয় করতে বেশি ভালোবাসেন। আবার অনেক আছে যারা ইনজয়ের থেকে কাজে বেশি মনোযোগ দেন। এরকম একদমই করা যাবে না। কারণ কাজের পাশাপাশি আপনার নিজেকে খুশি রাখার জন্যও অন্যান্য কিছু কাজ করতে হবে। 

যেন আপনি কখনো বলতে না পারেন সারাটা জীবন আমার কাজ করতে করতে চলে গেছে। জীবনের মুহূর্ততাকে আমি ইনজয় করতে পারেনি।  নিজেকে খুশি রাখার একটি কাজের মধ্যে হলো প্রিয়জনদের সাথে সময় দেওয়া। তাই এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রিয়জনদের সাথে সময় দেওয়ার কারণে আপনার মন অনেক খুশি থাকবে। উদাহরণ ফেসবুকের সিইও মাক্সজুকভার প্রতিদিন রাতে পরিবারের সাথে ডিনার করার বিষয়টিতে অনেক গুরুত্ব দিত।

১০।আর উন্নতি করার জন্য কাজ নির্ধারণ করা

আরো উন্নতি করার জন্য কাজ নির্ধারণ করা আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে অনেক সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনার ভুলগুলোকে আপনি ধরতে পারবেন এবং ভুলগুলোকে সহজে শুধরে ফেলতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ ইলান মাক্স তার প্রতিদিনের কাজে কি কি পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করেন।

এই দশটি অভ্যাস যদি আপনার দিনের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন তাহলে, আপনাকে আরো প্রোডাক্টটি এবং পরিপূর্ণ জীবন যাপন করতে সাহায্য করবে। এই প্রতিটি অভ্যাস আপনার জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করবে। মনে রাখবেন এর মধ্যে প্রতিটা অভ্যাসেজে আপনাকে নিখুঁতভাবে মেনে চলতে হবে তা কিন্তু নয়। তবে আপনার কাজ হলো জীবনের ছোটখাটো পরিবর্তন করা।


পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url