বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আজকে আপনাদের সামনে দিয়ে আসলাম নতুন আর্টিকেল। টাইটেল দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমরা কি নিয়ে আলোচনা করব। আমরা আজকে আলোচনা করব নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে।ক্ষমতায়ন শব্দটি অনেক বেশি ব্যবহারের কারণে , এর আসল অর্থটাই যেন হারিয়ে গেছে। একসময় ক্ষমতায়ন বলতে বোঝানো হতো বিভিন্ন ধরনের লড়াইকে।


কিন্তু বর্তমানে এর অর্থ বদলে গেছে। বর্তমানে ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায়, নারী ও পুরুষ উভয় নিজের জীবনকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে। নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলে। কারো উপর নির্ভরশীল হয় না। এক কথায় বলা যায় নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ানো।

ভূমিকা

কিছু বছর আগেও নারীকে বোঝা বলে মনে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এই নারী দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নারী ও পুরুষ উভয়ের হাত ধরে পৃথিবী আজ সভ্যতার পথে এগিয়ে চলছে। একটি দেশের যে কোন উন্নয়নের জন্য নারীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সভ্যতার এ অগ্রযাত্রায় মানবজাতির অভয় অংশের অবদানই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন দেশের উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য নারীর অংশগ্রহণ তথা নারীর ক্ষমতায় নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

নারীর ক্ষমতায়নঃ

নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টির উদ্ভব ঘটে ৬০ অথবা৭০ শতকের দিকে। আর সেই সময়ে জাতিসংঘ থেকে ঘোষিত হয় নারীর দশক( ১৯৭৬-১৯৮৫)। নারী ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় নারীর কল্যান, নারী পুরুষের সমতা এবং সম্পদের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য না করা। কারণ পূর্বে শুধুমাত্র পুরুষরাই সম্পদের অধিকারই হতো। কিন্তু বর্তমানে এই চিন্তা ভাবনাটি বদলে গেছে। এখন একজন নারীও সমান ভাবে সেই সম্পদের ভাগীদার। বর্তমানে এই নারীর ক্ষমতায় বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ও নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়ে আছে। কারণ বাংলাদেশের নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি সব রকম কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশেও আগে নারীদের শিক্ষার বিষয়টি ছিল অন্যরকম। নারীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নারী শিক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ উন্নয়নেও অন্যতম ভূমিকা রাখছে। একসময় পরিবারের পুরুষেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। এতে নারীর মতামতের প্রয়োজনও বোধ করত না। কিন্তু বর্তমানে নারী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রয়েছে। তারা এখন পুরুষের পাশাপাশি মতামত দিতে পারছেন।

নারী সমাজকে যুগ যুগ ধরে শোষিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের অবহেলিত করা হয়েছে। একজন পুরুষ যে বাইরে কাজ করে সংসারের চালায় তা কিন্তু নয়। বাড়ির ভেতরে নারীরও সংসারের সমান অবদান রয়েছে। বাইরে কাজ করে টাকা আয় করা যেমন কঠিন একটি কাজ। 

তেমনি বাড়ির ভেতরে সংসারটাকে সুন্দরভাবে গোছানো একটি কঠিন কাজ। তাই একটি সংসারে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে।বর্তমানে পৃথিবীর অর্ধেকে প্রায় নারী। তাই এখন যদি নারী সমাজ পিছিয়ে থাকে। তাহলে পৃথিবীও উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে থাকবে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নঃ

একসময় বদ্ধ ঘরে থাকা এই নারীরা বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। বলা যায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ উন্নয়নে রয়েছে তাদের হাতে। দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীরা অংশগ্রহণ করছে। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা মুখ্য। 

শুধু যে তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীরা থেমে আছে তা কিন্তু নয়। রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বিমান চালক সব ক্ষেত্রেই নারীরা অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশ খুব কম সময়ের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়ে রয়েছে। এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। কারণ  নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে এখনো বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে।

পূর্বে বাংলাদেশ খুব কম বয়সে নারীদের বিয়ে দেয়া হতো। তাদের পড়াশোনার কোন সুযোগ থাকত না। কিন্তু বর্তমানে সরকার একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন , যেখানে ১৮ বয়সের নিচে কোন নারীকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। এটি আইনত অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।

একসময় একটি পরিবারে শুধুমাত্র পুরুষেরা অর্থ উপার্জন করত। আর নারীরা সংসারে যাবতীয় কাজ করে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করছে। পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তারা নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছেন।

নারীরা যেন স্বশিক্ষিত হয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারে সেজন্য নারীদের বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যেমনঃ উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দেন। আবার উচ্চমাধ্যমিক থেকে তাদের উপবৃত্তের টাকা দেওয়া হয়। এসব সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে কারণ নারীরা যেন এসব শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে না থাকে।

নারীর সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের আইনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়েও মেয়ে শিশুর প্রতি নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই আইনের সংসদ কিছু এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা নারী সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কিছু আইন হলোঃ মুসলিম পারিবারিক আইন, যৌতুক নিরোধ আই্‌ বাল্যবিবাহ রোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ইত্যাদি আরো অনেক আইন রয়েছে। যেগুলো শুধুমাত্র না এর সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে। এবং এগুলো বাস্তবায়নও করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে যে লক্ষ্যগুলো অর্জন করেছে

১। নারী ও পুরুষের বৈষম্য দূর করনে দক্ষিণ এশিয়ার ৪৮ তম দেশে পরিণত হয়েছে।

২। নারী ও পুরুষের বৈষম্যে বিশ্বের ১৪৬ টি দেশের মধ্যে ৫৯ তম।

৩। সাক্ষরতার হার ৭৮.৭%

৪। নারী শিক্ষার হা.৬১.৪%

৫। রাজনৈতিক দল.৩৩%

এসব কারণে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়ে রয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়নে সরকারি যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছেঃ

স্বাধীনতা সংগ্রামের যে সকল নারী অবদান রেখেছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেসব নারীদের পুনর্বাসন ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ নারীর পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন বঙ্গবন্ধু সরকার। সেসময় অনুষ্ঠান জেলা ও ২৭ টি মহকুমা সহ ৬৪ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে নারী উন্নয়নের কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নারীর ক্ষমতায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এটিই ছিল নারী ক্ষমতায়নে প্রথম উদ্যক।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়ে রয়েছে। নারী ক্ষমতায়নের জন্য সরকারি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যার প্রধান লক্ষ্য হলো নির্যাতিত ও অবহেলিত এ দেশে বৃহত্তম নারী সমাজের ভাগ্যের উন্নয়ন করা।

নারীর উন্নয়নে প্রধান কিছু লক্ষ্যঃ

  • রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • নারী যেন রাজনৈতিক, সামাজি্‌ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
  • নারীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
  •  নারীকে শিক্ষিত ও মানবসম্পদে পরিণত করা।
  • নারী ও পুরুষের সমতা নিরসন করা।
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক যে কোন পর্যায়ে নারীর অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা।
  • নারী ও মেয়ে শিশুর ওপর নির্যাতন বন্ধ করা।
  • বাল্যবিবাহ রোধ ও যৌতুক বন্ধ করা।

না্রী ও পুরুষের পারস্পরিক নির্ভরশীলতারই সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। সৃষ্টিকর্তা নারী ও পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে তৈরি করেছেন। একজন নারী যেমন পুরুষকে ছাড়া অপূর্ণ। তেমনে একজন পুরুষ নারীকে ছাড়া অপূর্ণ। পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেকই রয়েছে নারী। তাই পৃথিবীকে যদি উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাহলে এতে নারী সমাজকেও উন্নয়ন করতে হবে। জাতীয় উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে নারীকে বাদ দিয়ে কোন কিছুই সম্ভব নয়। তাই ঘরের ভেতরে এবং বাহিরে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। আর এই সুযোগ যদি করে দেওয়া যায় তাহলে একমাত্র একটি দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৩

প্রিয় পাঠক আপনি জানতে চেয়েছেন নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৩ সালে কত। আপনি জেনে অবাক হবেন যে নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে .৭ তম।

নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের ৫টি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ

বর্তমান সরকারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে একটি হলো 'নারীর ক্ষমতায়নে একই মূল্যে সমান অধিকার' সাধনের লক্ষ্যে সঠিকভাবে চিন্তা করা। নারীদের উন্নত ক্ষমতা এনে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইনী এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলি হলো নারীদের ক্ষমতার অনুসন্ধানের জন্য সক্রিয় উদ্যোগ।

 শিক্ষা ও প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীরা একই মাত্রায় পৌরসভা ও নির্বাচন আস্তে আস্তি সহজ করা, নারীদের প্রযুক্তি ও উদ্যোগের ক্ষেত্রে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ বাধাবার্তা করা। নারীদের দায়িত্ব ও দ্বারা বোর্ড সহিত নির্বাচন সংকল্প করা এবং নারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা অনুষ্ঠিত করা।

নারীর ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারীরা এখন আর শুধু অন্তঃ প্রবাসী নয় বরং তারা উন্নয়নে পুরুষের সম অংশীদারিত্বের দাবি রাখে। অথচ নারী সমাজ যুগ যুগ ধরে শোষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় কারনে সামাজিক কুসংস্কার নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীদের সর্বদা রাখা হয়েছে তাদের অবদমিত। 

তাদের মেধা শ্রমশক্তিকে সমাজ ও দেশ গঠনের সম্পৃক্ত করা হয়নি। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতার গ্রহণ করা হয়নি কোনো বাস্তব পদক্ষেপ। মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পুরুষের পাশাপাশি সহায়তা করে নারী।এটি কোন একমুখী প্রক্রিয়া নয় বরং দিপাক্ষিক প্রক্রিয়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লোককে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জাতীয় উন্নতির কথা বললে নারীকে বাদ দিয়ে কোন ভাবে সম্ভব না।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং জানতে পেরেছেন বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে। আমরা এই পর্বে আলোচনা করেছি নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে- বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে -বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের যে লক্ষ্য ওগুলো অর্জন করেছে । আজকের পর্ব যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url